ylliX - Online Advertising Network
অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে জুলাই ঘোষণাপত্র

অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে জুলাই ঘোষণাপত্র


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আগামী মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণাপত্রটি পাঠ হবে।


এদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ ১৫৮ সমন্বয়ক শপথ নেবেন। এই অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব দলকে যোগদানে আহ্বান করা হবে।


ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের দালিলিক ভিত্তি, বৈধতা ও নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, ৫ আগস্টের পরই ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজনীয় হলেও নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৪ সালের মধ্যেই ঘোষণাপত্রটি দেওয়া হচ্ছে। সংবিধানে এই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত হবে।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ে আমরা খুনি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলনে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে পতিত স্বৈরাচার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং এই আন্দোলনকে সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিকভাবে লেজিটিমেসি দিতে প্রোক্লামেশনের দরকার। যাতে পতিত স্বৈরাচার ২৪ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না পায়। রাজনৈতিক পালাবদলে ২৪কে অস্বীকার করে বিপ্লবীদের হয়রানি যাতে না করতে পারে সেজন্যও প্রোক্লামেশন জরুরি। এখনই ম্যান্ডেট নেই বলা হচ্ছে, পট পরিবর্তনে বিপ্লবীদের ঝামেলায় ফেলবে না, সেটার গ্যারান্টি কই?


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির ১৯৪৭ সাল, এরপর ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থান, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রভৃতি বিষয়সহ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব আন্দোলন সংগ্রাম এতে স্থান পাবে।


তারা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বিজয়ের পরে নতুন রাষ্ট্রে দেখা যায়নি। এখানে বাকশালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বাকশালের মাধ্যমে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ঘোষণা দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই জাতীয় আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী বাকশাল ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে নব্য বাকশাল কায়েম হয়েছে সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তারপর কোন প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে তরুণদের হাত ধরে চব্বিশের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন বিলোপ ঘটেছে সেটিও উল্লেখ করা হবে।


এর পাশাপাশি জুলাই প্রোক্লামেশনে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র রেফারেন্স হিসেবে যুক্ত করা হবে। একাত্তরের মূল চেতনা ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ এই ঘোষণাপত্রে স্থান পাবে। এগুলোর পাশাপাশি নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র মূলনীতি হিসেবে যুক্ত হবে।


প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক কমিটি সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবে উল্লেখ করেছিল- মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে প্রথম রিপাবলিকের এবং জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করে দ্বিতীয় রিপাবলিকের প্রস্তাবনা হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণাপত্রের সব আয়োজন করা হচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি।


নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্রে নতুন বাংলাদেশের জনআকাঙ্ক্ষার কথাও উঠে আসবে।


নাগরিক কমিটির সদস্য মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক আহসান বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে অবৈধ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে পরবর্তী বাংলাদেশকে বাংলাদেশ ২.০ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছিল। এটিই দ্বিতীয় রিপাবলিক।


তিনি বলেন, ফ্রান্সে কিং লুইস ফিলিপের পতনের মাধ্যমে দেশটির জনগণ একটা নতুন গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে। এরপরে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন, নাইজেরিয়াসহ প্রত্যেকটা দেশই একটা ডিক্টেটরশিপের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যে সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গেছে। এইটাকেই তারা সেকেন্ড রিপাবলিক হিসেবে আখ্যায়িত করে। যেখানে সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া মৌলিক চাহিদা পূরণ ও নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।


জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বাংলানিউজকে বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘোষণাপত্রে থাকবে। এখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সব দলমতের মানুষ সবাইকে আমন্ত্রণ করা হবে। জনগণ যেন এই ঘোষণাপত্রকে গ্রহণ করে সেটার জন্য চেষ্টা করা হবে। মূলত, এর মাধ্যমে একটি স্পষ্ট দলিল দেওয়া হলো।


জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অভ্যুত্থান হলো এর পেছনের কারণ কী, কেন মানুষ আন্দোলনে এসেছে এটার দালিলিক প্রমাণ। ইতিহাসের পরতে পরতে বিভিন্ন ঘটনা যা কিছু হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন এক দফার আন্দোলন হলো এটার কারণগুলো কী?অর্থাৎ সব প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে যেভাবে অভ্যুত্থান হলো সেটির দালিলিক প্রমাণ এখানে আসবে।

 

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪

এফএইচ/এমজে






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *